শব্দার্থ ও টীকা

একাদশ- দ্বাদশ শ্রেণি - বাংলা - সাহিত্যপাঠ | | NCTB BOOK


গরজে - গর্জন করে ৷
ভারা ভারা - ‘ভারা' অর্থ ধান রাখার পাত্র। এরকম পাত্রের সমষ্টি বোঝাতে এখানে ব্যবহৃত হয়েছে।
ক্ষুরধারা - ক্ষুরের মতো ধারালো যে প্রবাহ বা স্রোত ।
খরপরশা - ধারালো বর্শা। এখানে ধারালো বর্শার মতো ।
আমি - সাধারণ অর্থে কৃষক । প্রতীকী অর্থে শিল্পস্রষ্টা কবি । 
আমি একেলা - কৃষক কিংবা শিল্পস্রষ্টা কবির নিঃসঙ্গ অবস্থা।
চারিদিকে বাঁকা জল করিছে খেলা - ধানক্ষেতটি ছোট দ্বীপের আঙ্গিকে চিত্রিত। তার পাশে ঘূর্ণায়মান স্রোতের উদ্দামতা। নদীর ‘বাঁকা' জলস্রোতে বেষ্টিত ছোট ক্ষেতটুকুর আশু বিলীয়মান হওয়ার ইঙ্গিত রয়েছে এ অংশে। ‘বাঁকা জল’ এখানে অনন্ত কালস্রোতের প্রতীক ।
তরুছায়ামসী-মাখা  - ওপারের মেঘে ঢাকা গ্রামটি যেন গাছের ছায়ার কালো রঙে মাখানো।
গান গেয়ে তরী বেয়ে কে আসে পারে -  ক্ষুরের মতো ধারালো জলস্রোতে গান গাইতে গাইতে যে মাঝি পারের দিকে এগিয়ে আসছে, রবীন্দ্র-ভাবনায় সে নির্মোহ মহাকালের প্রতীক । 
কোনো দিকে নাহি চায় - মহাকালের প্রতীক এই মাঝি নিরাসক্ত বলেই তার সুনির্দিষ্ট দৃষ্টিপাত নেই ।
দেখে যেন মনে হয় চিনি উহারে - এই আগন্তুক মাঝি কৃষক বা শিল্পস্রষ্টা কবির হয়ত চেনা। কেননা, চেনা মনে হলেও কৃষক বা শিল্পস্রষ্টা কবির সংশয় থেকেই যায় ।
ওগো, তুমি কোথা যাও কোন বিদেশে ? - নির্বিকার মাঝির দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য কৃষক বা কবির চেষ্টা। ‘বিদেশ’ এখানে চিরায়ত শিল্পলোকের প্রতীক হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে।
বারেক ভিড়াও তরী কূলেতে এসে - চিরায়ত শিল্পলোকে ঠাঁই পাওয়ার জন্যই কৃষকরূপী কবির ব্যাকুল অনুনয় এখানে প্রকাশিত ।
আমার সোনার ধান - কৃষকের শ্রেষ্ঠ ফসল। ব্যঞ্জনার্থে শিল্পস্রষ্টা কবির সৃষ্টিসম্ভার।
আর আছে, আর নাই, দিয়েছি ভরে - ছোট জমিতে উৎপন্ন ফসলের সবটাই অর্থাৎ কবির সমগ্র সৃষ্টি তুলে দেওয়া হয়েছে মহাকালের স্রোতে ভেসে আসা সোনার তরী-রূপী চিরায়ত শিল্পলোকে ৷
থরে বিথরে - স্তরে স্তরে, সুবিন্যস্ত করে ।
এখন আমারে লহো করুণা করে - ফসল বা সৃষ্টিসম্ভার তুলে দেওয়া হয়েছে নৌকায়। এখন ফসল বা সৃষ্টির স্রষ্টা স্থান পেতে চায় ওই মহাকালের নৌকায় ।
ঠাঁই নাই, ঠাঁই নাই ছোট সে তরী - সোনার তরীতে মহৎ সৃষ্টিরই স্থান সংকুলান হয় কেবল । ব্যক্তিসত্তা ও তার শারীরিক অস্তিত্বকে নিশ্চিতভাবে হতে হয় মহাকালের নিষ্ঠুর কালগ্রাসের শিকার ।
শূন্য নদীর তীরে রহিনু পড়ি - নিঃসঙ্গ অপূর্ণতার বেদনা নিয়ে আসন্ন ও অনিবার্য মৃত্যুর প্রতীক্ষার ইঙ্গিত। এ প্রসঙ্গে রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন : “মহাকাল আমার সর্বস্ব লইয়া যায় বটে, কিন্তু আমাকে ফেলিয়া যায় বিস্মৃতি ও অবহেলার মধ্যে। ... সোনার তরীর নেয়ে আমার সোনার ধান লইয়া যায় খেয়াপারে, কিন্তু আমাকে লয় না ।”
 

Content added By
Promotion